রহস্যময় রানি নেফারতিতি।

মেঘদল ব্যান্ড এর একটি গান আমাকে মাঝে মাঝেই বিমোহিত করে রাখে। গানটির কথা ও সুরের অপূর্ব মায়াজাল আমাকে যেন আমার থেকে বের করে নিয়ে যায়। গানটি করা হয়েছে মিসরীয় রানি নেফারতিতি কে নিয়ে। গানটির দু’লাইন তুলে ধরলাম এখানে-

যাচ্ছো চলে নেফারতিতি
বিষন্ন চুল উড়ছে হাওয়ায়।

পুরো গানটির লিরিক এখানে পাবেন। গানটি “নিয়ন আলোয় স্বাগতম” অ্যালবাম এ আছে। গানটি যতই শুনি আরও শুনতে ইচ্ছে করে। কেমন একটা যেন মায়া আছে। ঠিক যেমন মায়া আছে নেফারতিতি নামটির মধ্যে। কয়েক হাজার বছর ধরে এই নামটি মানুষ কে আলোড়িত করে রেখেছে।

মিসরীয় সভ্যতা আগাগোড়াই একটা রহস্যে ঘেরা সভ্যতা। আর সেই রহস্যে ঘেরা সভ্যতার রানি ছিলেই এই নেফারতিতি। তাহলে বুঝতেই পারছেন ইনি নিজে কতটা রহস্যময় ছিলেন। নেফারতিতি ছিলেন প্রচণ্ড সুন্দরি একজন মহিলা। তার সৌন্দর্য নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য গল্প কবিতা।

বার্লিন এর Neues Museum এ রাখা নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তি

এই নেফারতিতি নিয়ে এখনো অনেক রহস্য রয়ে গেছে। তিনি ঠিক কোথায় জন্মেছিলেন এখনো সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। কারো কারো মতে তিনি আখমিম শহরে জন্ম গ্রহন করেছিলেন আবার কেও কেও বলে তিনি মিশরের বাইরে জন্মগ্রহন করেছিলেন। বেশিরভাগ এর মত হোলও নেফারতিতি ছিলেন আয় এর কন্যা। আয় ছিলেন ফারাও এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি তিন তিন জন ফারাও এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলান এবং ধরা হয় তিনি ফারাও তুতেনখামেন এর রাজ্যের অন্নতম শক্তি ছিলেন। এই তুতেনখামেন আবার আরেক বিস্ময়।

নেফারতিতি বিয়ে করেন ফারাও তৃতীয় আমেনহটেপ এর সন্তান আখেনাতেন কে যিনি পরবর্তী ফারাও হিসেবে রাজত্ব করেন চতুর্থ আমেনহটেপ হিসেবে। ধারনা করা হয় নেফারতিতি ও আখেনাতেন এর মধ্যে ছিল ভালবাসার কোনও কমতি ছিল না যা সাধারনত মিসরীয় ফারাও দের মধ্যে খুজে পাওয়া যায় না। তারা দুজনে মিলে প্রায় খৃস্ট পূর্ব ১৩৫৩ থেকে ১৩৩৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

নেফারতিতি ও আখেনাতেন মিলে মিশরে সূর্য পুজা এর গোড়াপত্তন করেন। তারা ছিলেন সূর্য দেবতা আতেন ( Aten ) এর পুজারি। তারা দুজনে মিলে এই সূর্য পূজার নতুন এক ধর্মের প্রচলন করেন এবং তারা দুজন ছিলেন এই ধর্মের কাণ্ডারি। তাদের মাদ্ধমেই সাধারন মানুষ সূর্য দেবতার সাথে সংযোগ স্থাপন করতো। তারা একটি শহর ও প্রতিস্থা করেন এই সূর্য দেবের প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শন করে যেই শহরটি বর্তমানে আমারনা নামে পরিচিত। এই শহরে খোলা আকাশের নিচে এখনো কিছু সূর্য দেবের উপাসনালয় আছে।

নেফারতিতি, আখেনাতেন ও তাদের সন্তানরা।

রহস্যে ঘেরা এই রানি নেফারতিতির রহস্যময় জীবনের মতো তার মৃত্যু ও রহস্যময়। ঠিক কবে তার মৃত্যু হয়েছিল জানা যায় নি। ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছিল তাও জানা যায় নি। আখেনাতেন এর রাজত্তের চতুর্দশ তম বছর থেকে হঠাৎ করে হারিয়ে যান এই রানি। এরপর আর তার সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায় নি। কেও কেও ধারনা করে এরপর তিনি মাড়া যান। আবার কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে এসময় তিনি এতই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন যে পুরুষের মতো পোশাক পড়তে শুরু করেন। একারনে তাকে আর খুজে পাওয়া যায় নি। এমন কি নেফারতিতির কোনও মমি ও খুজে পাওয়া যায় নি এখন পর্যন্ত।

সূর্য দেবতার উপাসনারত নেফারতিতি।

ইতিহাসে নেফারতিতি সৌন্দর্যের রানি হিসেবেই স্বীকৃত। যেমন আলোচিত মিসরের ই ক্লিওপেট্রা, ট্রয় নগরীর হেলেন। জানিনা আরও কতদিন নেফারতিতি রহস্যময়তার মদ্ধেই থাকবেন। তিনি এক অদ্ভুত মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছেন যা ক্রমশই টানে। তবে কিছু কিছু রহস্য মনে হয় রহস্য থাকাটাই শ্রেয়। কারন মায়াজালে যদি মায়া না থাকে তাহলে সেটা শুধুই জাল হয়ে থাকে।

লেখাটি শুরু করেছিলাম মেঘদল এর নেফারতিতি গানটির দু’টি লাইন দিয়ে, শেষ ও করতে চাই একি গানের আরও কয়েকটি লাইন দিয়ে-

কিছু সূর্যবন্দী মেঘ
কিছু বিস্মরনের নদী
বয়ে যায় তোমার আত্মার কাছাকাছি
নেফারতিতি

 

তথ্য সুত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Nefertiti
২. http://www.biography.com/people/nefertiti-9421166

বি.দ্রঃ সকল ছবি গুগল থেকে ধার করা।