বিপদ সংকেত- কোনটার কি অর্থ?

বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবন এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছরই আমরা ছোট ছোট ঝড়ের মোকাবিলা করি। তবে মাঝে মাঝেই চলে আসে বড় মাপের ঝর। সিডর, আয়লা, বুলবুল, আম্ফান যেই আঘাত করে গেছে সেটাই এখনও সামলে উঠতে পারেনি আমাদের উপকুলীয় অঞ্চল এরই মধ্যে চলে এসেছে সিত্রাং। যখন এই ব্লগ লিখছি তখন মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু আমরা কি আসলে জানি এই বিপদ সংকেত এর কোনটার কি অর্থ? অনেকই জানিনা। তাই ভাবলাম এইটা জেনে রাখা উচিৎ। তাই একটু পড়াশোনা করে ফেললাম, আর নিজে যা জানলাম তা অন্যকে জানানো দায়িত্ব মনে করে লিখতে বসলাম।

সমুদ্র বন্দরের জন্য সংকেত রয়েছে  মোট ১১ টি। আসুন দেখে কোন সতর্ক সংকেত এর অর্থ আসলে কি-


‪১নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেতঃ

ই বিপদ সংকেতটি শুধুমাত্র দূরবর্তী সমুদ্রের জন্য। এই সংকেত এর অর্থ সমুদ্রের দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিঃমিঃ, যা সামূদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে। জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। ‪‎ এই সংকেত নদী বন্দরের জন্য প্রযোজ্য নয়।


২নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেতঃ

বিপদ সংকেতটিও শুধুমাত্র দূরবর্তী সমুদ্রের জন্য। এই সংকেত এর অর্থ দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। এই সংকেত থাকলে বুঝতে হবে বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।

সতর্ক সংকেত প্রদর্শনের নিয়ম।


৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেতঃ

এই সংকেতটি সমুদ্র বন্দর উপকূলীয় অঞ্চল ও নদী বন্দরের জন্য প্রযোজ্য। এই সংকেত থাকলে বুঝতে হবে বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কিঃমিঃ হতে পারে। এই সংকেত থাকলে ৬৫ ফুট এবং এর কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌযান গুলোকে অতি দ্রুত বন্দরে ফিরে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে হবে।

৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেতঃ

এই সংকেত সমুদ্র বন্দর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। এই সংকেত এর অর্থ বন্দর ও আশেপাশের অঞ্চল ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘন্টায় ৫১-৬১ কিঃমিঃ তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি। ১৫০ ফুট বা এর থেকে কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌযান গুলোকে অতি দ্রুত বন্দরে ফিরে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে হবে।

৫নং বিপদ সংকেতঃ
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৬নং বিপদ সংকেতঃ
এই সংকেত এর অর্থ বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।


‪‎৭নং বিপদ সংকেতঃ
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঘূণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৮নং মহাবিপদ সংকেতঃ
বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্দ্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।


৯নং মহাবিপদ সংকেতঃ
বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘূণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্দ্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।


‪‎১০নং মহাবিপদ সংকেতঃ
বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘূণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্দ্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।


‪‎১১নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেতঃ

আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দূর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।

Leave a Comment