বুক রিভিউঃ হরিশঙ্কর জলদাসের “পৌরাণিক গল্প”।

মহাভারত এর সহজ অনুবাদ পড়েছি, মহাভারত এর বিভিন্ন ক্যারেকটার নিয়েও অনেক অনেক লেখা পড়েছি। কিন্তু হরিশঙ্কর জলদাস এর “পৌরাণিক গল্প” একসাথে অনেকগুলো নতুন জানালা খুলে দিলেন, চারিদিক থেকে অচেনা অবাধ বাতাস বিভ্রান্ত করে তুললো আমাকে। বইয়ের প্রতিটা পাতা পরের পাতার দিকে নিয়ে গেছে মোহবিষ্ট্ করে। নতুন করে অনেক কিছু পড়তে হবে এখন।

বইটিতে মোট ১৩ টি গল্প আছে।

১. উচ্ছিষ্টঃ এই গল্পটি আবর্তিত হয়ে অসুররাজ রাবন এর প্রধান স্ত্রী মন্দোদরী কে ঘিরে। এই গল্পে লেখক যেন প্রশ্ন করছেন  মন্দোদরী কে এবং তার উত্তরের মাধ্যমে উঠে আসছে মন্দোদরী এর কাহিনী। মন্দোদরী ছিলেন অসুরদের মধ্যে সেরা স্তাপত্য শিল্পী ময়দানব ও অপ্সরা হেমার কন্যা। রাবন কে দেখে বিমোহিত হয়ে ময়দানব তার কন্যা মন্দোদরীর সাথে রাবনের বিয়ে দেয়। কিন্তু তাহলে গল্পের নাম উচ্ছিষ্ট কেন?

রাবন যখন সীতা হরন করে তখন রামের তো মাথা খারাপ অবস্থা। কিভাবে উদ্ধার করবে সীতাকে। এসময় উপায় বাতলে দেয় বিভীষণ। ঘরের শত্রু বিভীষণ নামে খ্যাত রাবনের ভাই বিভীষণ। অসুররাজ্য লঙ্কার দখল নিজের করে নিতে বিভীষণ রাম কে বলে দেয় রাবন বধের উপায়। ফলাফল লঙ্কার পরাজয় ও রাবন বধ। পুরস্কার সরুপ রাম বিভীষণের হাতে তুলে দেয় লঙ্কা ও রাবনের প্রধান স্ত্রী মন্দোদরী কে। এক ভাইয়ের স্ত্রী যখন আরেক ভাইয়ের সম্পত্তি তখন তো তাকে উচ্ছিষ্টই বলা হবে। তবে এই গল্প আপনার মহাভারতের প্রতি এতদিনের যে দৃষ্টিভঙ্গি তাকে একেবারে দুমড়ে মুচরে দিবে।    

২. অনার্য অর্জুনঃ পরলোকে দেখা হয়ে একলব্য এর সাথে অর্জুনের। হ্যা মহাভারতের সেই দুর্ভাগা একলব্য, তবে এই অর্জুন কিন্তু পঞ্ছ পাণ্ডবের অর্জুন না, নরসিংদির অর্জুন। অবশ্য পাঁচ এই অর্জুনরাও পাঁচ ভাই আর অর্জুন ও তৃতীয় সন্তান। জীবন সংগ্রামের ঘানি টানতে টানতে একদিন ঢাকায় বাসের নীচে পরে মারা যায় অর্জুন। কাটা পরেছিল ডান হাত।

মহাভারতে একলব্য তার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল হারায় অর্জুনের জেদের কারণে, কারণ একলব্য অর্জুনের থেকে ভালো তীরন্দাজ ছিল, কিন্তু একজন অনার্য হয়েও একলব্য অর্জুনের থেকে ভালো তীরন্দাজ এটা অর্জুন মেনে নিতে পারেনি।

গল্পে পরলোকে এই একলব্য ও নরসিংদীর অর্জুনের মধ্যে কথোপকথনের মাধম্যে লেখক কাহিনী এগিয়ে নিয়েছেন। শেষটা দুর্দান্ত ছিল। শেষ দুতিনটা লাইন তুলে ধরলাম-

 কেন?

আমি কে অনার্য ব্যাধ।

আমি তো অনার্য ছিলাম না!

ছিলে তো! দরিদ্ররা যে অনার্য ব্যাধের ও অধম!

৩. দেউলিয়াঃ এই গল্পে লেখক দেবরাজ ইন্দ্র ও ঋষি গৌতমের স্ত্রী অহল্যার অবৈধ সম্পর্ক কে তুলে এনেছেন। গল্পের শেষে অহল্যা যখন বলে “স্বর্গসুখের চেয়ে দেহসুখ লোভনীয়। আরেকবার অপার দেহ তৃপ্তির বিনময়ে আরও সহস্র বছর পাষাণ হয়ে থাকতে আমার আপত্তি নেই ঋষি গৌতম“- তখন ঋষি গৌতমের নিজেকে দেউলিয়া ছাড়া আর কিই বা মনে হবে?    

৪. তুমি কে হে বাপুঃ এই গল্পে লেখক যে মহাভরতের রচয়িতা ব্যাসদেব কে মর্গের টেবিলে ফেলে পোস্ট মরটেম করেছেন। শল্য চিকিৎসকের ভুমিকায় রেখেছেন অদ্বৈত মল্লবরধন কে।

এর বেশি কিছু লেখা ঠিক হবে না। বইটি অবশ্যই পড়ুন। আপনার চিরচেনা মহাভারত কে অন্যরকম লাগবে। তবে মহাভারত না পড়া থাকলে অবশ্যই বলবো আগে মহাভারত পড়ে নিন। নাহলে কিন্তু বুঝতে বেশ কষ্ট হবে।

বইঃ পৌরাণিক গল্প

লেখকঃ হরিশঙ্কর জলদাস

প্রকাশনীঃ অনন্যা।