কন্যা-জায়া-জননী।

যে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটা প্রতিদিন গন পরিবহণে লোলুপ দৃষ্টির সামনে কুঁকড়ে থাকে সে যেদিন জানবে তার বাবা ও একি কাজ প্রত্যহ করছে তার অনুভূতি ঠিক কেমন হবে ভেবে দেখেছেন?

যে কর্মজীবী মহিলাটার প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে বা অফিস থেকে ফেরার পথে সদ্য নাকের নীচে গোঁফ গজানো ছেলেদের বাজে মন্তব্যে বমি আসে, সে যেদিন জানবে তার সমবয়সী ছেলেটাও পাড়ার মোরে দাড়িয়ে একি কাজ করে তার অনুভুতিই বা কি হবে ভাবুন তো একবার।

বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর কথা শুনেছেন কখনো? বলা হয় পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন একটা প্রজাপতি ডানা ঝাঁপটায়, সেই ডানা ঝাপটানো বাতাসে যে নাড়া দেয়, পৃথিবীর অপর প্রান্তে যেতে যেতে সেটা প্রলয়ংকারি ঝড়ে পরিনত হয়। কেন তুললাম বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর কথা? আপনার আমার করা ছোট ছোট অপরাধ সমাজটাকে আস্তাকুরে পরিনত করে। আমি হয়তো রাস্তায় একটা কলা খেয়ে খোসাটা ফেললাম। ভাবলাম এতে আর কি হবে। বেখেয়ালে একটা বাচ্চা ওই খোসাটায় পিছলে রাস্তায় পরে যেতে পারে। ঠিক সেসময় হয়তো আপনি আপনার নতুন কেনা বাইকটা নিয়ে বাচ্চাটার ছোট্ট মাথাটার উপর দিয়ে চলে যেতে পারেন, কারন আপনার বাইকের মিটারের কাটা তখন আশি পেড়িয়ে গেছে। আপনার আর কিছু করার ছিল না তখন।

আচ্ছা বাদ দেন। তখন স্কুলে পড়ি, রেস্লিং দেখতে খুব ভাল লাগতো। আমার প্রিয় ছিল স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন। কারো ছিল আন্ডারটেকার, কারো রক, কারো বিগ শো। সেসময় এক নারী রেসলার ছিল নাম চায়না। মনে আছে আপনার? ধরুন একটা রেস্লিং ম্যাচ আয়োজন করা হল, প্রতিযোগী চায়না ও আইনস্টাইন। কে জিতবে বলে আপনার ধারনা?

আজকালকার বাচ্চাগুলো দেখছেন কেমন যেন ব্রয়লার মুরগি হয়ে যাচ্ছে। কেন জানেন? বাবা মা চায় তার বাচ্চা ক্লাসে প্রথম হবে। ক্লাস টু এর বাচ্চার দুইটা ব্যাচ, তিনটা প্রাইভেট টিউটর। বাচ্চা পড়বে না খেলবে? সারাদিনে বাচ্চার ব্যায়াম বলতে ব্যাগ ভর্তি বই বহন। না হচ্ছে তার শারীরিক বিকাশ, না হচ্ছে মানসিক বিকাশ। যে কারনে বাচ্চাদের কথা তুললাম। একটা বাচ্চা বড় হয়ে একজন মানুষ হবে নাকি একজন জানোয়ার হবে সেটা যেসব প্রভাবকের উপর নির্ভর করে তার মধ্যে অন্যতম বাচ্চাটার শৈশব। একটা সুন্দর শৈশব পারে আপনার সন্তানকে একজন সুন্দর মনের মানুষ বানাতে। আপনার সন্তানকে মানুষ বানাচ্ছেন তো? ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর সাথে সাথে মানুষ ও তো হতে হবে।

ও আচ্ছা আপনি এখনো চায়না আর আইনস্টাইন এর মারামারি করার কথা কেন বললাম বুঝতে পারেননি? বলছিলাম শক্তি দিয়ে কি সবসময় জন্মের সার্থকতা বিচার করা যায়? শতাব্দীর পর শতাব্দী নারীকে গৃহবন্দী করে তার সাথে শক্তির পরীক্ষায় জিতে যাওয়াকে আপনি হয়তো পৌরুষ ভাবতে পারেন, কিন্তু আসলেই কি সেটা পৌরুষ। কোথায় যেন পড়েছিলাম, বাচ্চা প্রসবের সময় একজন নারী যে ব্যাথা অনুভব করে সেটা প্রায় ৭০ টা (এরকমই ছিল সংখ্যাটা যতদূর মনে পড়ছে) হাড় ভাঙার সমান ব্যাথা। পারবেন সহ্য করতে? বাদ দেন।

আসুন কবি নজরুলের সুরে সুর মিলিয়ে বলি-

সাম্যের গান গাই
আমার চক্ষে পুরুষ
রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান
সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর।