ওবায়েদ হকের “একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা”।

রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথা মোতাবেক দুর্বোধ্য বাক্য গঠনে সাহিত্য সৃষ্টির প্রথাকে ভেঙ্গে নাগরিক ভাষ্যে সাহিত্য সৃষ্টি করেছিলেন তখন ছ্যা ছ্যা করে উঠেছিল দুর্দান্ত প্রতাপশালী বাংলা সাহিত্যিকেরা। সাহিত্যের জাত গেল জাত গেল গান গাইতে শুরু করে আজব এক আবহ সৃষ্টি হয়েছিল তখন। হুমায়ুন আহমেদ যখন ছোট ছোট সরল বাক্যের সহজ মারপ্যাচে কঠিন সমাজের কঠিন বাস্তবতাকে টেনে হিঁচড়ে জনগনের হাতে তুলে ধরেছিল তখন ও একি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে। সাহিত্য নাকি সস্তা হয়ে গিয়েছিল তাঁর হাতে পড়ে।

ওবায়েদ হক তাঁর প্রথম গ্রন্থ “একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা”র ভুমিকায় লিখেছেন- “গল্প কবিতা উপন্যাস সমাজের দর্পণস্বরূপ। কঠিন শব্দ, দুর্বোধ্য বাক্য আর ধুয়াচ্ছন্ন কাহিনী কখনো একটা স্বচ্ছ দর্পণ হতে পারেনা”। একজন সাহিত্যিক কি তাঁর পাঠকের হাতে সমাজের দর্পণ তুলে দেবে নাকি তাঁর পাঠককে ল্যাবিরিন্থ এ ফেলে মজা লুটবে সেটা তাঁর একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। ওবায়েদ হক বেছে নিয়েছেন দর্পণ, পরিস্কার ঝকঝকে। সে দর্পণে সমাজের নগ্নতা যেমন পরিস্কার ফুটে উঠেছে তেমনি ফুটে উঠেছে আবেগ বিবেক এমন সব জটিল মনুষ্য অনুভূতি।

প্রচ্ছদ

“একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা” তরুন লেখক ওবায়েদ হকের প্রথম গল্পগ্রন্থ। ওবায়েদ হকের লেখার সাথে পরিচয় অন্তর্জালে খুজে পাওয়া “নীল পাহাড়” উপন্যাসের পিডিএফ কপির মাধ্যমে। নতুন লেখক বলে বইটা কিছুটা অবহেলায় পড়ে ছিল বেশ কিছুদিন ইবুক ফোল্ডারে। প্রচ্ছদটা খুব টেনেছিল বলে একদিন পড়া শুরু করে দিলাম, অনেক কষ্ট করে পরে প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হয়েছে, বলা যায় বাধ্য করেছে তাঁর উপন্যাসের প্রতিটা লাইন। এরপর একে একে পড়ে ফেলি “জলেশ্বরী”, “তেইল্যা চোরা” ও “নেপথ্যে নেমকহারাম”। একি লেখকের পর পর চারটা বই ভাল লাগা মানে কি নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। কিন্তু লেখকের প্রথম গ্রন্থ “একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা” কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। মুদ্রিত সকল কপি বাজারে শেষ, এবং লেখক পুনর্মুদ্রণ এ আগ্রহী নন। লেখক নাকি তাঁর এই বইয়ের গল্পগুলোকে অপরিনত মনে করেন। কিন্তু পাঠকের ক্রমাগত প্যানপ্যানানিতে অবশেষে লেখক বইয়ের পিডিএফ কপি উন্মুক্ত করেছেন অন্তর্জালে। এবং দুঃখের বিষয় লেখকের প্রকাশিত সকল বই এখন আমার পড়া এবং শুধুমাত্র এই বইটির প্রিন্টেড কপি সংগ্রহ করতে না পাড়ার একটা শুন্যতা আমার বুকশেলফ ও হৃদয়ে দারুনভাবে দৃশ্যমান।

বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখক পরিচিতির জায়গায় লেখা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উলটে নাকি লেখকের পরিচয় পাওয়া যায় না, লেখকের পরিচয় পাওয়া যায় প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠার মধ্যের কালো কালো বর্ণগুলিতে। সেকারনে ওবায়েদ হককে চিনতে হলে বিচরন করতে হবে তাঁর বইয়ের বর্ণ থেকে বর্ণে। “একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা” বইটাতে ৮ টি ছোট গল্প ছিল যেখান থেকে ২ টি ছোট গল্প ‘তিথির জোছনা’ ও ‘একজন গোয়েন্দার অপমৃত্যু’ স্থান পায়নি পিডিএফ ভার্সনে। সেখানে স্থান করে নিয়েছে নতুন দুটি গল্প ‘বুড়ো দাঁড়কাক মড়ে না’ ও ‘বিসর্জন’। পুরনো গল্প ৬ টি হল ‘ভুল সাক্ষাৎ’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ‘সুখের মনি’, ‘একটি সাড়ি ও কামরাঙ্গা বোমা’,’ছোঁয়া’, ‘উপহার’। প্রতিটা গল্প হৃদয়স্পর্শী, অন্যভাবে ভাবতে শেখাবে। ছোট গল্প সম্পর্কে কিছু বললে সেটা স্পয়লার হয়ে যায়, তাই কিছু বলবো না। পড়ে দেখুন, ভাল লাগবে আশা করি।

বইঃ একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা
লেখকঃ ওবায়েদ হক
প্রকাশনিঃ আদী প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৪

পিডিএফ কপি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।